বাংলাদেশ ০৬:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৫, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ওআইসি- কমস্টেক এর উদ্যোগে বাংলাদেশ পাকিস্তান সহযোগিতার নতুন অধ্যায়

দুই দেশের সম্পর্কের ইতিহাস দীর্ঘ ও জটিল। কখনো উষ্ণতা, কখনো দূরত্ব—এই ওঠানামার মধ্য দিয়েই পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বন্ধন এগিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে, যেখানে রাজনৈতিক ভাষার পরিবর্তে বিজ্ঞান, শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন হয়ে উঠছে সম্পর্কের নতুন ভাষা।

এই পরিবর্তনের মূলে রয়েছে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (OIC) বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বিষয়ক স্থায়ী কমিটি COMSTECH, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন কোঅর্ডিনেটর জেনারেল প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী। তাঁর প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন দিকনির্দেশনায় COMSTECH শুধু বিজ্ঞানভিত্তিক সংস্থা নয়, বরং এখন মুসলিম বিশ্বের “বিজ্ঞান কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দু” হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

COMSTECH কী

COMSTECH প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালে Organization of Islamic Cooperation (OIC) এর উদ্যোগে, সদস্য দেশগুলোর বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে। ইসলামাবাদভিত্তিক এই সংস্থা গবেষণা, উদ্ভাবন, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বকে জ্ঞানভিত্তিক অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিতে কাজ করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কমস্টেক বিশেষভাবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে একাডেমিক ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

পাকিস্তান–বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন অধ্যায়

COMSTECH এর লক্ষ্য সবসময়ই ছিল ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিষ্ঠানটি বিশেষভাবে মনোনিবেশ করেছে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে COMSTECH এবং ইউনিভার্সিটি অব লাহোর যৌথভাবে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য একটি ফেলোশিপ প্রোগ্রাম চালু করে, যেখানে প্রকৌশল, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পূর্ণ বৃত্তির সুযোগ প্রদান করা হয়। এটি ছিল এমন এক উদ্যোগ, যা দুই দেশের তরুণ প্রজন্মকে সরাসরি জ্ঞান ও গবেষণার মাধ্যমে সংযুক্ত করেছে। এরপর জুন ২০২৫-এ COMSTECH এর আমন্ত্রণে বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিদল পাকিস্তান সফর করে। সেই সফরের সময় দুই দেশের ২০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিগুলো যৌথ গবেষণা, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বিনিময়, নতুন পাঠ্যক্রম উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য নতুন পথ খুলে দেয়।

এই উদ্যোগগুলো শুধু শিক্ষার ক্ষেত্রেই নয়—দুই দেশের মানুষের মধ্যে বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধিতেও সহায়তা করছে। একাডেমিক কূটনীতি আজ রাজনৈতিক সম্পর্কের বাইরে গিয়ে এক নতুন মানবিক সংযোগ গড়ে তুলছে।

বাংলাদেশের ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টার সফর ও প্রশংসা

২০২৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশের ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন পাকিস্তানের ইসলামাবাদে COMSTECH সেক্রেটারিয়েট পরিদর্শন করেন। তিনি কমস্টেক এর ভূমিকাকে ব্যাপকভাবে প্রশংসা করেন—বৈজ্ঞানিক গবেষণা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও দারিদ্র্য হ্রাস-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে।
উপদেষ্টা বিশেষভাবে কমস্টেক এর ১০০টি বৃত্তি ঘোষণার প্রশংসা করেন, যা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের পাকিস্তানের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিচ্ছে।

মানুষে–মানুষে সম্পর্ক: কূটনীতির নতুন রূপ

রাজনৈতিক কূটনীতি প্রায়ই আনুষ্ঠানিক ও জটিল হয়। কিন্তু শিক্ষা ও বিজ্ঞানভিত্তিক কূটনীতি মানুষের হৃদয়ে প্রভাব ফেলে। যখন একজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পাকিস্তানে গবেষণার সুযোগ পায়, অথবা একজন পাকিস্তানি অধ্যাপক বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেন—তখন সৃষ্ট হয় এক মানবিক সম্পর্ক, যা কোনো রাজনৈতিক ভাষণ বা চুক্তির চেয়েও গভীর।
এই উদ্যোগগুলো তরুণ প্রজন্মকে কাছাকাছি আনছে, এবং তাদের চোখে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্কের নতুন সংজ্ঞা তৈরি করছে—একটি সম্পর্ক যা জ্ঞান, সহযোগিতা ও শ্রদ্ধার উপর ভিত্তি করে।

কোঅর্ডিনেটর জেনারেল প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইকবাল চৌধুরীর নেতৃত্ব

COMSTECH-এর সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন মুসলিম বিশ্বের বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও কোঅর্ডিনেটর জেনারেল প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী। তিনি পাকিস্তানের অন্যতম খ্যাতনামা জৈবরসায়নবিদ, যিনি ১,১০০-এরও বেশি গবেষণা প্রবন্ধ, ৪০-এর বেশি পেটেন্ট এবং বহু আন্তর্জাতিক সম্মান অর্জন করেছেন। তাঁর প্রাপ্ত পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে Hilal-e-Imtiaz, Sitara-e-Imtiaz, Tamgha-e-Imtiaz, এবং মুসলিম বিশ্বের সর্বোচ্চ বিজ্ঞান পুরস্কার Mustafa Prize (২০২১)।

তিনি শুধু একজন বিজ্ঞানী নন—বরং একজন দূরদর্শী নেতা, যিনি বিশ্বাস করেন “বিজ্ঞানই শান্তি ও সহযোগিতার সর্বজনীন ভাষা।” তাঁর নেতৃত্বে কমস্টেক আজ ইসলামি বিশ্বের বিজ্ঞান-কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

ভবিষ্যতের পথে

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের তরুণ গবেষকরা যদি এই সহযোগিতাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে, তবে এটি দক্ষিণ এশিয়ায় জ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক উন্নয়নের নতুন উদাহরণ হবে। সমঝোতা স্মারকগুলোর বাস্তবায়ন, গবেষণা তহবিল বৃদ্ধি এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি এই সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে পারে।

কমস্টেক আজ প্রমাণ করেছে যে বিজ্ঞান শুধু গবেষণাগারে সীমাবদ্ধ নয়—এটি দুই জাতির বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সেতুও হতে পারে। প্রফেসর ড. ইকবাল চৌধুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তান–বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে—যেখানে রাজনীতির পরিবর্তে নেতৃত্ব দিচ্ছে জ্ঞান, গবেষণা ও মানবসম্পদের বিকাশ।

একজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে পাকিস্তানে থেকে আমি দেখি—দুই দেশের তরুণেরা এখন একসঙ্গে শিখছে, উদ্ভাবন করছে, এবং ভবিষ্যতের সেতুবন্ধন তৈরি করছে। এই পথেই নিহিত দক্ষিণ এশিয়ার টেকসই অগ্রগতির সম্ভাবনা।
এই নবযুগ কেবল ইতিহাসের একটি অধ্যায় নয়, বরং এটি দুই জাতির মন, মেধা ও মর্যাদার এক নতুন সংযোগ।

লেখক:
গওহর মুহাম্মদ জাওয়াদ
বাংলাদেশী শিক্ষার্থী, কায়েদ-ই-আজম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামাবাদ, পাকিস্তান।

ট্যাগ :

ওআইসি- কমস্টেক এর উদ্যোগে বাংলাদেশ পাকিস্তান সহযোগিতার নতুন অধ্যায়

প্রকাশিত: ১২:৩০:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

দুই দেশের সম্পর্কের ইতিহাস দীর্ঘ ও জটিল। কখনো উষ্ণতা, কখনো দূরত্ব—এই ওঠানামার মধ্য দিয়েই পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বন্ধন এগিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে, যেখানে রাজনৈতিক ভাষার পরিবর্তে বিজ্ঞান, শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন হয়ে উঠছে সম্পর্কের নতুন ভাষা।

এই পরিবর্তনের মূলে রয়েছে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (OIC) বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বিষয়ক স্থায়ী কমিটি COMSTECH, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন কোঅর্ডিনেটর জেনারেল প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী। তাঁর প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন দিকনির্দেশনায় COMSTECH শুধু বিজ্ঞানভিত্তিক সংস্থা নয়, বরং এখন মুসলিম বিশ্বের “বিজ্ঞান কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দু” হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

COMSTECH কী

COMSTECH প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালে Organization of Islamic Cooperation (OIC) এর উদ্যোগে, সদস্য দেশগুলোর বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে। ইসলামাবাদভিত্তিক এই সংস্থা গবেষণা, উদ্ভাবন, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বকে জ্ঞানভিত্তিক অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিতে কাজ করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কমস্টেক বিশেষভাবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে একাডেমিক ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

পাকিস্তান–বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন অধ্যায়

COMSTECH এর লক্ষ্য সবসময়ই ছিল ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রতিষ্ঠানটি বিশেষভাবে মনোনিবেশ করেছে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে COMSTECH এবং ইউনিভার্সিটি অব লাহোর যৌথভাবে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য একটি ফেলোশিপ প্রোগ্রাম চালু করে, যেখানে প্রকৌশল, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পূর্ণ বৃত্তির সুযোগ প্রদান করা হয়। এটি ছিল এমন এক উদ্যোগ, যা দুই দেশের তরুণ প্রজন্মকে সরাসরি জ্ঞান ও গবেষণার মাধ্যমে সংযুক্ত করেছে। এরপর জুন ২০২৫-এ COMSTECH এর আমন্ত্রণে বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিদল পাকিস্তান সফর করে। সেই সফরের সময় দুই দেশের ২০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিগুলো যৌথ গবেষণা, শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বিনিময়, নতুন পাঠ্যক্রম উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য নতুন পথ খুলে দেয়।

এই উদ্যোগগুলো শুধু শিক্ষার ক্ষেত্রেই নয়—দুই দেশের মানুষের মধ্যে বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধিতেও সহায়তা করছে। একাডেমিক কূটনীতি আজ রাজনৈতিক সম্পর্কের বাইরে গিয়ে এক নতুন মানবিক সংযোগ গড়ে তুলছে।

বাংলাদেশের ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টার সফর ও প্রশংসা

২০২৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশের ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন পাকিস্তানের ইসলামাবাদে COMSTECH সেক্রেটারিয়েট পরিদর্শন করেন। তিনি কমস্টেক এর ভূমিকাকে ব্যাপকভাবে প্রশংসা করেন—বৈজ্ঞানিক গবেষণা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও দারিদ্র্য হ্রাস-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে।
উপদেষ্টা বিশেষভাবে কমস্টেক এর ১০০টি বৃত্তি ঘোষণার প্রশংসা করেন, যা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের পাকিস্তানের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিচ্ছে।

মানুষে–মানুষে সম্পর্ক: কূটনীতির নতুন রূপ

রাজনৈতিক কূটনীতি প্রায়ই আনুষ্ঠানিক ও জটিল হয়। কিন্তু শিক্ষা ও বিজ্ঞানভিত্তিক কূটনীতি মানুষের হৃদয়ে প্রভাব ফেলে। যখন একজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পাকিস্তানে গবেষণার সুযোগ পায়, অথবা একজন পাকিস্তানি অধ্যাপক বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেন—তখন সৃষ্ট হয় এক মানবিক সম্পর্ক, যা কোনো রাজনৈতিক ভাষণ বা চুক্তির চেয়েও গভীর।
এই উদ্যোগগুলো তরুণ প্রজন্মকে কাছাকাছি আনছে, এবং তাদের চোখে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্কের নতুন সংজ্ঞা তৈরি করছে—একটি সম্পর্ক যা জ্ঞান, সহযোগিতা ও শ্রদ্ধার উপর ভিত্তি করে।

কোঅর্ডিনেটর জেনারেল প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইকবাল চৌধুরীর নেতৃত্ব

COMSTECH-এর সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন মুসলিম বিশ্বের বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও কোঅর্ডিনেটর জেনারেল প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী। তিনি পাকিস্তানের অন্যতম খ্যাতনামা জৈবরসায়নবিদ, যিনি ১,১০০-এরও বেশি গবেষণা প্রবন্ধ, ৪০-এর বেশি পেটেন্ট এবং বহু আন্তর্জাতিক সম্মান অর্জন করেছেন। তাঁর প্রাপ্ত পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে Hilal-e-Imtiaz, Sitara-e-Imtiaz, Tamgha-e-Imtiaz, এবং মুসলিম বিশ্বের সর্বোচ্চ বিজ্ঞান পুরস্কার Mustafa Prize (২০২১)।

তিনি শুধু একজন বিজ্ঞানী নন—বরং একজন দূরদর্শী নেতা, যিনি বিশ্বাস করেন “বিজ্ঞানই শান্তি ও সহযোগিতার সর্বজনীন ভাষা।” তাঁর নেতৃত্বে কমস্টেক আজ ইসলামি বিশ্বের বিজ্ঞান-কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

ভবিষ্যতের পথে

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের তরুণ গবেষকরা যদি এই সহযোগিতাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে, তবে এটি দক্ষিণ এশিয়ায় জ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক উন্নয়নের নতুন উদাহরণ হবে। সমঝোতা স্মারকগুলোর বাস্তবায়ন, গবেষণা তহবিল বৃদ্ধি এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি এই সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করতে পারে।

কমস্টেক আজ প্রমাণ করেছে যে বিজ্ঞান শুধু গবেষণাগারে সীমাবদ্ধ নয়—এটি দুই জাতির বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সেতুও হতে পারে। প্রফেসর ড. ইকবাল চৌধুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তান–বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে—যেখানে রাজনীতির পরিবর্তে নেতৃত্ব দিচ্ছে জ্ঞান, গবেষণা ও মানবসম্পদের বিকাশ।

একজন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী হিসেবে পাকিস্তানে থেকে আমি দেখি—দুই দেশের তরুণেরা এখন একসঙ্গে শিখছে, উদ্ভাবন করছে, এবং ভবিষ্যতের সেতুবন্ধন তৈরি করছে। এই পথেই নিহিত দক্ষিণ এশিয়ার টেকসই অগ্রগতির সম্ভাবনা।
এই নবযুগ কেবল ইতিহাসের একটি অধ্যায় নয়, বরং এটি দুই জাতির মন, মেধা ও মর্যাদার এক নতুন সংযোগ।

লেখক:
গওহর মুহাম্মদ জাওয়াদ
বাংলাদেশী শিক্ষার্থী, কায়েদ-ই-আজম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামাবাদ, পাকিস্তান।