দীর্ঘ ৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে। ২৫টি পদের মধ্যে ২০টিতেই জয়ী হয়েছেন তাদের প্রার্থীরা।
অন্যদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে এবং বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস) ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্যানেল থেকে দুটি করে পদে প্রার্থীরা জয় লাভ করেছেন।
গত ১১ সেপ্টেম্বর জাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর পরদিন, শুক্র ও শনিবার দিনভর ভোট গণনা শেষে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে।
ভিপি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীর জয়
নির্বাচন কমিশনের ফলাফল অনুসারে, ভিপি পদে ৩ হাজার ৩৩৪ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রশিদ (জিতু)। তিনি ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেলের প্রার্থী ছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের আরিফ উল্লাহ পেয়েছেন ২ হাজার ৩৯২ ভোট।
জিএস-এজিএসসহ ২০ পদে শিবিরের জয়
সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৩ হাজার ৯৩০ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেলের মো. মাজহারুল ইসলাম। এছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে যথাক্রমে ফেরদৌস আল হাসান ও আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা বিজয়ী হয়েছেন।
শীর্ষ পদ ছাড়াও শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক, পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সম্পাদক, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক, তথ্যপ্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক, স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা সম্পাদকসহ আরও বেশ কিছু পদে এই প্যানেলের প্রার্থীরা জয় লাভ করেছেন।
অন্যান্য বিজয়ীরা
ছাত্রশিবিরের প্যানেলের বাইরে সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক পদে বাগছাস-সমর্থিত আহসান লাবিব এবং ক্রীড়া সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মাহামুদুল হাসান জয়ী হয়েছেন। এছাড়া সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মুহিবুল্লাহ শেখ এবং কার্যকরী সদস্য পদে মোহাম্মদ আলী চিশতী বিজয়ী হয়েছেন।
জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনে প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে। শিক্ষার্থীদের রায়ের প্রতি সবাইকে সম্মান দেখাতে হবে। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সম্মিলিতভাবে কাজ করবেন, সেই প্রত্যাশা থাকবে। নির্বাচন করার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার কিছুটা ঘাটতি থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাঁরা নির্বাচনটি সম্পন্ন করতে পেরেছেন। এটি তাঁদের জন্য গৌরবের ব্যাপার।
ফল ঘোষণার আগে নির্বাচন কমিশনের সদস্যের পদত্যাগ
নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগমুহূর্তে জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য রেজওয়ানা করিম পদত্যাগ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগমুহূর্মুতে তিনি তাঁর বিভাগের একজন স্টাফকে দিয়ে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। আমি বিস্মিত হয়েছি, গতকাল পর্যন্ত তিনি আমাদের সঙ্গে আন্তরিকভাবে কাজ করেছেন। রাতের মধ্যে কি এমন হলো যে তিনি পদত্যাগ করলেন! এটি আমাদের সবাইকে বিস্মিত করেছে।’
অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম আরও বলেন, রেজওয়ানা করিম কয়েকদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর তিনি কাজ করেছেন, মিটিং করেছেন। তাঁর কোনো বিষয় আপত্তি থাকলে সেগুলো জানাতে পারতেন। কিন্তু নির্বাচনের পর ফল ঘোষণার আগমুহূর্তে পদত্যাগ করা বিস্ময়কর।