গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে ও অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে ইউরোপের বড় বড় শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ–মিছিল করেছেন।
এই বিক্ষোভ যুক্তরাজ্য, ইতালি, স্পেন ও পর্তুগালসহ বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্পেনের বার্সেলোনা ও রাজধানী মাদ্রিদে গত শনিবারের বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছিল বেশ কয়েক সপ্তাহ আগে। তবে ইতালির রোম এবং পর্তুগালের লিসবনে বিক্ষোভ শুরু হয় গাজাগামী ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ ইসরায়েল আটক করার পর। ইসরায়েলি বাহিনী ভূমধ্যসাগরে থাকতেই এই নৌবহরটি আটক করে।
নৌবহরটি ইসরায়েলের নৃশংস হামলা ও দুর্ভিক্ষে বিপর্যস্ত গাজায় অবরোধ ভাঙার চেষ্টা হিসেবে বার্সেলোনা থেকে যাত্রা করেছিল। নৌবহর থেকে আটক হওয়া ৪৫০ জন মানবাধিকারকর্মী ও অন্যান্যদের মধ্যে ৪০ জনেরও বেশি ছিলেন স্পেনের নাগরিক। আটককৃতদের মধ্যে বার্সেলোনার একজন সাবেক মেয়রও রয়েছেন।
এদিকে, গাজার মানুষের প্রতি সংহতি জানিয়ে গত শুক্রবার ইতালিতে ২০ লাখের বেশি মানুষ একদিনের সাধারণ ধর্মঘটে রাস্তায় নেমেছিলেন। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে স্পেনে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন বেড়েছে। পাশাপাশি দেশটির সরকার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর চরম দক্ষিণপন্থী সরকারের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বাড়াচ্ছে।
গত মাসে একটি সাইক্লিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আসা ইসরায়েলি দলকে লক্ষ্য করে বিক্ষোভ হওয়ায় প্রতিযোগিতার আয়োজন ব্যাহত হয়।
ওই সময় স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ গাজায় চলমান যুদ্ধকে ‘জাতিহত্যা’ বলে অভিহিত করেন।
তিনি আন্তর্জাতিক সব ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ইসরায়েলি দলের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করার দাবিও জানান।
ইউরোপজুড়ে যখন এই বিক্ষোভ চলছিল, ঠিক তখনই ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস গাজা যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব আংশিকভাবে মেনে নিতে রাজি আছে বলে জানিয়েছে।
গত দুই বছর ধরে চলা গাজা যুদ্ধে ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং উপত্যকাটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
বার্সেলোনার টাউন হল কর্তৃপক্ষের মতে, পুলিশের ধারণা অনুযায়ী শনিবারের বিক্ষোভে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিলেন।
বিক্ষোভকারী মারিয়া জেসুস পাররা বলেন, “১৯৪০–এর দশকে (ইউরোপে যেমন) দেখেছিলাম, তেমন একটি জেনোসাইড এবার আমরা চোখের সামনে ঘটতে দেখছি, এও কীভাবে সম্ভব? এখন আর কেউ এটা বলতে পারবে না যে, সেখানে কী ঘটছে, তারা সেটা জানতেন না।”
এদিকে ম্যানচেস্টারে একটি সিনাগগে প্রাণঘাতী হামলার পর পুলিশ লন্ডনে গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ স্থগিত করার অনুরোধ করেছিল। কিন্তু অনুরোধ উপেক্ষা করে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের সমর্থনে লন্ডনে গত শনিবার একটি বিক্ষোভ–মিছিল বের হয়।পুলিশ মিছিল থেকে কমপক্ষে ৪৪২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে দ্য গার্ডিয়ান তাদের প্রতিবেদনে এই সংখ্যা ৫০০ বলে উল্লেখ করেছে।
গত বৃহস্পতিবার ম্যানচেস্টারের ওই সিনাগগে হামলায় দুজন নিহত হন এবং পুলিশ পরে হামলাকারীকে গুলি করে হত্যা করে। হামলাকারী সিরীয় বংশোদ্ভূত একজন ব্রিটিশ নাগরিক ছিলেন। এই হামলার পর পুলিশ লন্ডনজুড়ে সিনাগগ ও মসজিদ ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
পুলিশ জানায়, শনিবারের এই বিক্ষোভ তাদের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে ব্যাহত করতে পারে। বিক্ষোভের আয়োজকেরা পুলিশ ও সরকারের বিক্ষোভ স্থগিত করার অনুরোধ অগ্রাহ্য করেন।
তাদের যুক্তি, বৃহস্পতিবার সিনাগগে হামলার আগেই এ বিক্ষোভ আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। ফিলিস্তিনপন্থী সংগঠন প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদ জানাতে এই বিক্ষোভ ডাকা হয়েছিল।