ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। ভিপি-জিএস, এজিএসসহ মোট ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টিতেই বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছেন তারা। দীর্ঘ বিরতির পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে এমন ফলাফল ঢাবির রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সিনেট ভবনে ডাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন।
শীর্ষ পদে শিবির-সমর্থিত প্রার্থীদের জয়
ভিপি পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ জোটের মো. আবু সাদিক (সাদিক কায়েম) ১৪ হাজার ৪২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৫ হাজার ৭০৮ ভোট।
জিএস পদেও জয় এসেছে জোটের ঝুলিতে—এসএম ফরহাদ ১০ হাজার ৭৯৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের তানভীর বারী হামীম ৫ হাজার ২৮৩ ভোট পান।
এজিএস পদে মুহা. মহিউদ্দীন খান ১১ হাজার ৭৭২ ভোটে জয়ী হন।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে জয়
এছাড়া বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদেও শিবির-সমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ফাতেমা তাসনিম জুমা পেয়েছেন ১০ হাজার ৬৩১ ভোট। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ইকবাল হায়দার, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে খান জসিম, মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক পদে সাখাওয়াত জাকারিয়া, ক্রীড়া সম্পাদক পদে আরমান হোসাইন, পরিবহন সম্পাদক পদে আসিফ আবদুল্লাহসহ প্রায় সব কটি গুরুত্বপূর্ণ পদে ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট বিজয়ী হয়েছে।
সদস্য পদে বিপুল বিজয়
সদস্য পদেও শিবির-সমর্থিত প্রার্থীরা বিপুলভাবে জয়ী হয়েছেন। সাবিকুন্নাহার তামান্না, সর্বমিত্র, আনাস ইবনে মুনির, ইমরান হোসেন, তাজিনুর রহমান, মেফতাহুল হোসেন আল মারুফ, বেলাল হোসাইন অপু খান, রাইসুল ইসলাম, মো. শাহিনুর রহমান, আফসানা আক্তার ও রায়হান উদ্দীন—এই ১১ জন জয় লাভ করেছেন।
প্যানেলের বাইরে জয়ী ৫ জন
বাকি পাঁচ পদে জয় এসেছে স্বতন্ত্র বা বিকল্প প্রার্থীদের হাতে। সমাজসেবা সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন যুবাইর বিন নেছারী, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে সানজিদা আহমেদ তন্বী। এছাড়া সদস্য পদে জয় পেয়েছেন হেমা চাকমা ও উম্মু উসউয়াতুন রাফিয়া।
ভোটার উপস্থিতি ও পরিবেশ
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। কোনো বড় ধরনের সহিংসতা বা অরাজকতা ছাড়াই শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ হয়েছে ডাকসুর ৩৮তম নির্বাচন।
এবার ডাকসুতে মোট ভোটার ছিলেন ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে পাঁচটি ছাত্রী হলে ১৮ হাজার ৯৫৯ এবং ১৩টি ছাত্র হলে ২০ হাজার ৯১৫ জন ভোটার তালিকাভুক্ত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ডাকসু নির্বাচন সবসময়ই দেশের ছাত্ররাজনীতি ও জাতীয় রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলে। এবারের নির্বাচনে ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্রার্থীদের বিপুল বিজয়কে অনেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতিতে এক বড় পরিবর্তনের সূচনা হিসেবে দেখছেন। বিভিন্ন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই ফলাফল আগামীতে দেশের সামগ্রিক রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।