জুলাই ? ক্যালেন্ডারে একটি মাস।
কিন্তু ইতিহাসে ? এটি একটি রক্তাক্ত অধ্যায়।
এমন একটি সময়, যখন দেশের সবচেয়ে সাহসী সন্তানরা কলম ফেলে রাস্তায় নেমে এসেছিল।
তারা চেয়েছিল প্রশ্ন করতে, তারা চেয়েছিল বাঁচতে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে টানা আন্দোলন শুরু হয়েছিল গত ১ জুলাই থেকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা প্রথমেই দাঁড়িয়েছিল—
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, শাহজালাল, বরিশাল, বুয়েট, রুয়েট, মেডিকেল কলেজ—এমনকি মাদ্রাসার ছাত্ররাও….. অহিংস এই আন্দোলন সহিংস হয় ১৫ জুলাই থেকে। পরে তা গণ–অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। প্রতিটি প্রান্ত থেকে উঠেছিল একই কণ্ঠস্বর:
“এ দেশ আমাদের, আমরা চুপ থাকবো না!”
সবচেয়ে বিস্ময়কর ছিল— রাজনীতি করা না করা, দলীয় পরিচয় থাকা না থাকা, সব পেরিয়ে সাধারণ ছাত্ররাও এসে দাঁড়িয়েছিল এই অন্যায়ের প্রতিবাদে।
যে ছেলেটা সকালে চা খেতে গিয়ে বলত, “এই দেশ তো চলতে পারত ভালোভাবে”,
সে-ও বিকেলে প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিল।
হলে হলে, ক্যাম্পাসে, বাসায়—সবাই রাজপথে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।এটা ছিল সত্যিকার অর্থে একটা ছাত্র-জাগরণ।
যেই রাষ্ট্র কথা শোনে না……..!
সে খুব তাড়াতাড়ি ভয় দেখাতে শুরু করে।
প্রথমে নজরদারি। তারপর গুজব। তারপর লাঠি। তারপর গুলি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর ছাড়পত্রহীন গুলি চালায় পুলিশ।
চোখে গুলি, পিঠে লাঠি, মুখে থাপ্পড়, বুক চিরে রক্ত।পাশাপাশি আওয়ামী লীগের দলীয় ক্যাডাররা পুলিশের ছত্রছায়ায় ছাত্রদের উপর সশস্ত্র হামলা চালায় ———-।
কেউ বেঁচে থাকলে গুম করে, না থাকলে মামলা দিয়ে চিরতরে শেষ করে দেয় আর তাদের এই নিরীহ অত্যাচার সামনের দিকে এগোতে থাকে। তারপর জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে একসাথে বিক্ষোভ, শহীদ, প্রতিবাদ—সব একসাথে ঘটে।
রাস্তায় পড়ে থাকা রক্তাক্ত বুট জুতা, হল থেকে তোলা রাতের অডিও, টিয়ার শেলের গন্ধ, আর একের পর এক অদৃশ্য হয়ে যাওয়া মুখ …..!
ফেসবুকে একটাই ক্যাপশন ঘুরে ফিরে আসে:
“আর একটা মৃত্যু মানে আরেকটা প্রতিবাদ। আমরা থামবো না।”
একসময় ছাত্র-জনতা আন্দোলনের আরো দ্রুত গতিতে এগোতে থাকে ঠিক তখনই দেশ ছেড়ে পালান স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা।
এই মাস প্রমাণ করেছে—বাংলাদেশে গণতন্ত্র শুধু কাগজে আছে, মাঠে নেই।
সরকার ভয় পায় প্রশ্নকে,
তারা কাঁপে ছাত্রদের কণ্ঠে,
তারা সন্ত্রাসকে রাষ্ট্রের হাতিয়ার বানিয়ে সত্যকে চেপে রাখে। বিচার তো দূরে থাক,
বিচার চাওয়ার জন্যই হত্যা করে দেয়।জুলাই আমাদের শিখিয়েছে—রাষ্ট্র যখন অন্যায় করে, প্রতিবাদ তখন অধিকার না, দায়িত্ব।
জুলাই শেষ হয়েছে।
কিন্তু শেষ হয়নি মায়ের কাঁদা, বন্ধুদের হারিয়ে যাওয়ার অপেক্ষা, পুলিশের মুখ চেনা হয়ে যাওয়া, কিংবা কোর্টে দৌড়াদৌড়ি করে বেঁচে থাকার লড়াই। তবু আমরা হার মানিনি।
জুলাই আমাদের শিখিয়েছে ভয় না পেতে।শিখিয়েছে শহীদের রক্তের প্রতি দায়িত্ববোধতা।
জুলাই শুধু স্মৃতি নয়,
জুলাই হলো শপথ—
যতবার অন্যায় হবে,
ততবার আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো।
স্মৃতির পাতায় আজও রক্ত শুকায়নি।
আমাদের ভাইদের নিরীহ ভাবে হত্যা করা আজও ভুলিনি — কখনো ভুলবো না ,,,,,,,,?
“লিখে রাখো, আমরা দাঁড়িয়েছিলাম।
এবং তুমিও দাঁড়াবে একদিন।”