গাছও যে অভিমান করতে পারে, সেটা যদি কেউ না দেখে বিশ্বাস না করে – তবে তাকে একবার স্পর্শ করতে বলুন লজ্জাবতিকে৷ চুপচাপ বসে থাকা এই উদ্ভিদটিকে বার বার বিরক্ত করার পর মনে হয় যেন নিজের মতো করে বলে উঠে- সব কিছুতেই হাত দিতে নেই! আহ..হা বিরক্ত করো না আমাকে৷
যুগ ও মানুষের পরিবর্তন হলো, কিন্তু লজ্জাবতী এখনো আগের মতোই ৷ তাই প্রশ্ন এখানেই থেকেই যায়, এটা কি আসলেই গাছ?
নরম পাতাগুলো নিয়ে উদ্ভিদের মাঝে বসে থাকে এক রহস্যময় গাছ লজ্জাবতি৷ একটু স্পর্শ পেলেই তার মধ্যে ফুটে উঠে রহস্য, মনে হয় আত্মরক্ষার জন্য লুকিয়ে নিয়েছে পাতাগুলো৷ ছোট ছোট শিশুরা ভয় পেলে যেমন মায়ের আঁচলে লুকায়, তেমনি মনে হয় লজ্জাবতীও মায়ের আঁচলে লুকায়৷
বিভিন্ন অঞ্চলে এই গাছটি ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত৷ বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে (লজ্জাবতী) সিলেটে (ছইতে মরা) বরিশালে (লাজুক লতা) নোয়াখালীতে (ছুইল্যা গুম গাছ) রাজশাহীতে ( ছুঁয়ে লজ্জা) চট্টগ্রামে ( ছুঁইলেই মরা গাছ৷
এই উদ্ভিদ এর বিজ্ঞানিক ইংরেজী নাম মিমোজা পিউডিকা (Mimosa পুদি), এই নাম সব চেয়ে বেশি পরিচিত। এটি একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ, ‘যা ফ্যাবেসি’ গোত্রের অন্তর্গত৷ পাতা স্পর্শ করলেই সংকুচিত হয়ে পরে যাওয়া এক ধরনের থিগমোন্যাস্টিক মুভমেন্ট বা সংবেদী প্রতিক্রিয়ার ফসল৷ এটি মূলত আত্মরক্ষা মূলক পদ্ধতি৷
লজ্জাবতী সাধারনত বর্ষা মৌসুমে বেশি বৃদ্ধি পায় এবং বর্ষার শেষে ফুল ফুটে, আবার পৌষ-মাঘ মাসে শুকিয়ে পড়ে, তবে শিকড় বেঁচে থাকে এবং পরের বছর আবার চারা গজায়৷
লজ্জাবতী শুধু রহস্যময় নয়, এই উদ্ভিদ থেকে মানুষের উপকারও হয়। সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় এক বৃদ্ধের সাথে। কুলাউরা উপজেলার ভূকশিমইল ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড এর সাবেক মেম্বার, মদনগৌরী গ্রামের বাসিন্দা আলহাজ্ব মাওঃ মনির আলী মেম্বার সাহেব – তিনি বলেন ছইতে মরা (লজ্জাবতী) দাঁতের ব্যাথা, ক্ষত সরাতে, আমাশয় ও পাইলসের জন্য উপকারী৷ তিনি বলেন, ছোট বেলা খেলার সাথী না পেলে, ছইতে মরার সাথে একা একা খেলা বা আনন্দ করা যেতো, আগে আগে অনেকেই বাড়ীর শোভা/সৌন্দর্য বাড়াতে গিয়ে বাগানে বা টবে লাগাতো এই উদ্ভিদ৷
লজ্জাবতী একটি প্রাকৃতিক বিস্ময়৷ উদ্ভিদ কিভাবে নিজের অস্তিত্ব রক্ষার প্রতিক্রিয়া দেখায়, তার এক জীবন্ত উদহারণ এই লজ্জাবতী৷ পরিবেশ পরিস্থিতিতে লোকজ সংস্কৃতির মিলনে লজ্জাবতী আমাদের শিক্ষা দেয়, নম্রতা কখনোই দুর্বলতা নয়৷