বাংলাদেশ ০৭:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫, ১০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসীর গুলিতে প্রাণ গেল কুলাউড়ার দিদারুলের ; পরিবারে শোকের মাতম

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটানে সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত হয়েছেন কুলাউড়ার সন্তান দিদারুল ইসলাম রতন (৩৬)। তিনি নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের (NYPD) একজন কর্মঠ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা ছিলেন। স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে একটি বহুতল অফিস ভবনে দায়িত্ব পালনকালে ২৭ বছর বয়সী শেন তামুরা নামের এক যুবকের ছোঁড়া গুলিতে প্রাণ হারান তিনি।

দিদারুল ইসলাম রতনের বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভার মাগুরা এলাকায়। বাবার নাম মো. আব্দুর রব, মায়ের নাম মিনারা বেগম। রতনের দুই বোন নাঈমা ও নাদিমা। রতনের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা, তিনি নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসের পার্চেস্টার এলাকায় বসবাস করেন। কর্মস্থল ছিল ব্রঙ্কসের ৪৭ প্রিসিঙ্ক্ট।

পরিবারের হৃদয়বিদারক প্রতিক্রিয়া মঙ্গলবার দুপুরে কুলাউড়ার মাগুরা এলাকায় রতনের শূন্য বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার আত্মীয় তাহেরা বেগম দুলির সঙ্গে।

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ভাইপো রতনের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। ও খুব শান্ত, ভদ্র, মেধাবী ছেলে ছিল। আমেরিকায় পুলিশে চাকরি করত, কত গর্ব করতাম আমরা! এখন সে নেই…!।

দুলির চোখের জল যেন থামতেই চাইছিল না। জানান, নিউইয়র্কে থাকা রতনের মা-বাবা, স্ত্রী ও বোনরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। হাসপাতাল থেকে মরদেহ বুঝে নেওয়ার সময় তারা সবাই ছিলেন, ছিল শুধু দীর্ঘশ্বাস আর বুকফাটা কান্না।

রতনের জন্ম বড়লেখা উপজেলার শিক্ষারমহল গ্রামে। তার বাবা আব্দুর রব দীর্ঘদিন কুয়েতে কর্মরত ছিলেন। পরে কুলাউড়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। রতন ২০০৯ সালে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। উচ্চশিক্ষা শেষ করে যুক্ত হন নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে।

এলাকার শিক্ষক আবু জাফর বলেন, রতন আমার ছাত্র ছিলো। মাগুরা এলাকার গর্ব ছিল। দেশে থাকতে সে ভালো খেলোয়াড় ছিল, খুবই মেধাবী ছিল। তাঁর মৃত্যু আমাদের ক্রীড়াঙ্গনেও গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে।

নিরবতায় ঢাকা পড়ে আছে মাগুরা গ্রাম। রতনের শূন্য বাড়ির সামনে মানুষের ভিড়, মুখে নেই কোনো শব্দ। শুধু একটা প্রশ্নই যেন বারবার ধাক্কা দিচ্ছে সবাইকে “এমন একজন তরুণ, পরিবারে আলো হয়ে থাকা মানুষ—এভাবে চলে গেল কেন?”

রতনের মৃত্যু কেবল একটি পরিবারের নয়, কুলাউড়ার, মৌলভীবাজারের, এমনকি প্রবাসী বাংলাদেশি সমাজেরও এক অপূরণীয় ক্ষতি।

কুলাউড়া পৌরসভার মাগুরা এলাকায় গেলে রতনের প্রতিবেশী ও এলাকার যুবক হাসিম খান ভূট্রো বলেন, রতন ভাই ছিলেন আমাদের গর্ব। ছোটবেলা থেকেই দেখতাম, পড়াশোনায় দারুণ ছিলেন, খেলাধুলাতেও এগিয়ে ছিলেন। পরে শুনি, আমেরিকায় গিয়ে পুলিশে চাকরি পেয়েছেন—তখন খুব গর্ব লাগতো। এলাকায় এসে আমাদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন। তার মতো ভদ্র, নম্র একজন মানুষকে এভাবে হারাবো, তা কখনও কল্পনাও করিনি। রতনের মৃত্যু আমাদের চোখে জল এনে দিয়েছে, এটা শুধু তাঁর পরিবারের নয়, পুরো মাগুরা এলাকারই অপূরণীয় ক্ষতি।

কুলাউড়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল বারী সুহেল বলেন, যতই দূরে থাকুন, রতন ভাই আমাদের হৃদয়ের কাছেই ছিলেন। তাঁর মৃত্যু আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে, এই পৃথিবী কতটা অনিশ্চিত। আমরা তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি, আর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।

যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসীর গুলিতে প্রাণ গেল কুলাউড়ার দিদারুলের ; পরিবারে শোকের মাতম

প্রকাশিত: ০৬:১২:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটানে সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত হয়েছেন কুলাউড়ার সন্তান দিদারুল ইসলাম রতন (৩৬)। তিনি নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের (NYPD) একজন কর্মঠ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা ছিলেন। স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে একটি বহুতল অফিস ভবনে দায়িত্ব পালনকালে ২৭ বছর বয়সী শেন তামুরা নামের এক যুবকের ছোঁড়া গুলিতে প্রাণ হারান তিনি।

দিদারুল ইসলাম রতনের বাড়ি মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভার মাগুরা এলাকায়। বাবার নাম মো. আব্দুর রব, মায়ের নাম মিনারা বেগম। রতনের দুই বোন নাঈমা ও নাদিমা। রতনের স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা, তিনি নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসের পার্চেস্টার এলাকায় বসবাস করেন। কর্মস্থল ছিল ব্রঙ্কসের ৪৭ প্রিসিঙ্ক্ট।

পরিবারের হৃদয়বিদারক প্রতিক্রিয়া মঙ্গলবার দুপুরে কুলাউড়ার মাগুরা এলাকায় রতনের শূন্য বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার আত্মীয় তাহেরা বেগম দুলির সঙ্গে।

তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ভাইপো রতনের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। ও খুব শান্ত, ভদ্র, মেধাবী ছেলে ছিল। আমেরিকায় পুলিশে চাকরি করত, কত গর্ব করতাম আমরা! এখন সে নেই…!।

দুলির চোখের জল যেন থামতেই চাইছিল না। জানান, নিউইয়র্কে থাকা রতনের মা-বাবা, স্ত্রী ও বোনরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। হাসপাতাল থেকে মরদেহ বুঝে নেওয়ার সময় তারা সবাই ছিলেন, ছিল শুধু দীর্ঘশ্বাস আর বুকফাটা কান্না।

রতনের জন্ম বড়লেখা উপজেলার শিক্ষারমহল গ্রামে। তার বাবা আব্দুর রব দীর্ঘদিন কুয়েতে কর্মরত ছিলেন। পরে কুলাউড়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। রতন ২০০৯ সালে পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। উচ্চশিক্ষা শেষ করে যুক্ত হন নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে।

এলাকার শিক্ষক আবু জাফর বলেন, রতন আমার ছাত্র ছিলো। মাগুরা এলাকার গর্ব ছিল। দেশে থাকতে সে ভালো খেলোয়াড় ছিল, খুবই মেধাবী ছিল। তাঁর মৃত্যু আমাদের ক্রীড়াঙ্গনেও গভীর শোকের ছায়া ফেলেছে।

নিরবতায় ঢাকা পড়ে আছে মাগুরা গ্রাম। রতনের শূন্য বাড়ির সামনে মানুষের ভিড়, মুখে নেই কোনো শব্দ। শুধু একটা প্রশ্নই যেন বারবার ধাক্কা দিচ্ছে সবাইকে “এমন একজন তরুণ, পরিবারে আলো হয়ে থাকা মানুষ—এভাবে চলে গেল কেন?”

রতনের মৃত্যু কেবল একটি পরিবারের নয়, কুলাউড়ার, মৌলভীবাজারের, এমনকি প্রবাসী বাংলাদেশি সমাজেরও এক অপূরণীয় ক্ষতি।

কুলাউড়া পৌরসভার মাগুরা এলাকায় গেলে রতনের প্রতিবেশী ও এলাকার যুবক হাসিম খান ভূট্রো বলেন, রতন ভাই ছিলেন আমাদের গর্ব। ছোটবেলা থেকেই দেখতাম, পড়াশোনায় দারুণ ছিলেন, খেলাধুলাতেও এগিয়ে ছিলেন। পরে শুনি, আমেরিকায় গিয়ে পুলিশে চাকরি পেয়েছেন—তখন খুব গর্ব লাগতো। এলাকায় এসে আমাদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন। তার মতো ভদ্র, নম্র একজন মানুষকে এভাবে হারাবো, তা কখনও কল্পনাও করিনি। রতনের মৃত্যু আমাদের চোখে জল এনে দিয়েছে, এটা শুধু তাঁর পরিবারের নয়, পুরো মাগুরা এলাকারই অপূরণীয় ক্ষতি।

কুলাউড়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল বারী সুহেল বলেন, যতই দূরে থাকুন, রতন ভাই আমাদের হৃদয়ের কাছেই ছিলেন। তাঁর মৃত্যু আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে, এই পৃথিবী কতটা অনিশ্চিত। আমরা তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি, আর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।