বাংলাদেশ ০৬:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫, ১০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সময় শেষ হলেও শেষ হয়নি কাজ, তারাপাশা বাজার সড়ক যেন মৃত্যু ফাঁদ

  • রাব্বি মিয়া
  • প্রকাশিত: ১০:০৭:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫
  • 20

মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের তারাপাশা বাজার এলাকার সড়ক দীর্ঘদিন ধরে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় পড়ে আছে। বড় বড় গর্তের কারণে বিশেষ করে টেংরা-তারাপাশা (দেওয়ানদিঘি পার হয়ে তারাপাশা বাজার পর্যন্ত) প্রায় আড়াই কিলোমিটার সড়ক এখন একেবারে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এই সড়কের ওপর নির্ভর করে দুটি ইউনিয়নের প্রায় বিশ হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে। তাছাড়া কমলগঞ্জ উপজেলার পতনষার ইউনিয়নের অনেক মানুষও এই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, রোগীবাহী যান, ব্যবসায়িক পণ্য পরিবহন এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে সাধারণ মানুষের চলাফেরা প্রতিনিয়তই ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। গর্ত আর খানাখন্দে ভরা রাস্তায় সিএনজি, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, নতুন করে রাস্তা বানানোর জন্য গত বছরের নভেম্বরে তারাপাশা বাজার রাস্তা ভাঙা হলেও এখন পর্যন্ত আর কেউ ধরেওনি, কাজও করেনি।  মনু নদীর বালু মহাল থেকে ভারী বালির ট্রাক ও ডাম্পার চলাচলের ফলে ভাঙা সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি সামান্য বৃষ্টিতেই এসব গর্তে পানি জমে থাকে, যা দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

তারাপাশা বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সেক্রেটারি ছায়েদ আহমদ বলেন, “রাস্তার এই বাজে অবস্থার কারণে বাজারে মানুষ আসতে চায় না, ফলে দিনদিন ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ যাচ্ছে।”

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সামছুল ইসলাম বলেন, “এই রাস্তাটি এখন যেন মরণ ফাঁদ। এই দুই-আড়াই কিলোমিটার রাস্তা পার হতে আমাদের আধা ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে।”

তারাপাশা হাই স্কুল এন্ড কলেজের ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শতাব্দী দেব বলেন, “গত বছরের নভেম্বর মাসে বাজারের রাস্তা ভাঙা হলেও এখন পর্যন্ত নতুন করে কাজ শুরু হয়নি, ফলে স্কুলের সামনের এই রাস্তায় বিশাল বিশাল গর্ত হয়েগেছে। যার জন্যে এইদিকে গাড়ি আসতে চায় না,  এমনকি আসতে চাইলেও ভাড়া নিচ্ছে অতিরিক্ত।”

স্থানীয় এক সিএনজি চালক জানান, “এ রাস্তা দিয়ে চলতে গিয়ে প্রতিদিনই গাড়ির নাট-বল্টু ঢিলে হয়ে যায়। মাসে পাঁচ-ছয় হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হয় শুধু মেরামতে।”

জানা যায়, এ.ডি.বি এর অর্থায়নে এফ.আর.ই.এ.ডি (Flood Reconstruction Emergency Assistance Project) নামক রাস্তার প্রজেক্টটি (৮,৪২৫ মিটার রাস্তার কাজ) শুরু হয় গতবছর স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের আমলে। ঠিকাদার মোঃ মুহিবুর রহমানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোঃ মুহিবুর রহমান এন্ড আর.এ.বি.আর.সি.এ প্রাইভেট লিমিটেড জেবি – এর সাথে ১১ কোটি ৬১ লক্ষ টাকার চুক্তি মূল্যের এই প্রজেক্ট শুরু হয় ০৮-০৫-২০২৪ এ , যার শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি মাসের ২ জুলাই অর্থাৎ ০২-০৭-২০২৫। যার প্রাক্কলিত মূল্য ১১ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা।

রাস্তা কাজ কেন শেষ হলো না জানতে চাইলে ঠিকাদার মোঃ মুহিবুর রহমান বলেন, “১২ থেকে ১৬, ১৬.৬ এবং ১৮ ফুট রাস্তার বরাদ্দের জন্য দেরি হয়েছে। কাজ শুরু করে দিব এবং আগামী আগষ্ট মাসের শেষের দিকে শেষ হয়ে যাবে।”

রাস্তার কাজ শেষ না হওয়ায় জনগণের ভুগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে রাজনগর উপজেলা প্রকৌশলী রাজু সেন বলেন, “ঠিকাদারের অসুস্থতার কারণে দেরি হয়েছে। ইতিমধ্যে ৬ হাজার মিটার কাজ শেষ হয়েছে, বাকি ২,৪২৫ মিটার রাস্তা শুরু হলে আমরা আশাবাদী দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।”

কবে নাগাদ শেষ হবে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “আগামীকাল (২৩ জুলাই) কাজ শুরু করবে ঠিকাদার, কাজ শুরু করলে ৫-৭ দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।”

কোন কারণে কাজ শেষ না হলে তার বিরুদ্ধে কোন
ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না তা জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, “নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেলে ২৮ দিনের ভেতরে ঠিকাদার কারণ দর্শানো এবং সময় চেয়ে নেয়ার কোন আবেদন না করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসনের অবহেলা এবং দীর্ঘসূত্রতার কারণে তারা বছরের পর বছর এই ভোগান্তি সহ্য করে আসছেন। এলাকাবাসী দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়ে ইতোমধ্যে মানববন্ধন ও সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

ট্যাগ :

সময় শেষ হলেও শেষ হয়নি কাজ, তারাপাশা বাজার সড়ক যেন মৃত্যু ফাঁদ

প্রকাশিত: ১০:০৭:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫

মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের তারাপাশা বাজার এলাকার সড়ক দীর্ঘদিন ধরে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় পড়ে আছে। বড় বড় গর্তের কারণে বিশেষ করে টেংরা-তারাপাশা (দেওয়ানদিঘি পার হয়ে তারাপাশা বাজার পর্যন্ত) প্রায় আড়াই কিলোমিটার সড়ক এখন একেবারে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এই সড়কের ওপর নির্ভর করে দুটি ইউনিয়নের প্রায় বিশ হাজার মানুষ প্রতিদিন যাতায়াত করে। তাছাড়া কমলগঞ্জ উপজেলার পতনষার ইউনিয়নের অনেক মানুষও এই সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, রোগীবাহী যান, ব্যবসায়িক পণ্য পরিবহন এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে সাধারণ মানুষের চলাফেরা প্রতিনিয়তই ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। গর্ত আর খানাখন্দে ভরা রাস্তায় সিএনজি, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, নতুন করে রাস্তা বানানোর জন্য গত বছরের নভেম্বরে তারাপাশা বাজার রাস্তা ভাঙা হলেও এখন পর্যন্ত আর কেউ ধরেওনি, কাজও করেনি।  মনু নদীর বালু মহাল থেকে ভারী বালির ট্রাক ও ডাম্পার চলাচলের ফলে ভাঙা সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি সামান্য বৃষ্টিতেই এসব গর্তে পানি জমে থাকে, যা দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

তারাপাশা বাজার ব্যবসায়ী কমিটির সেক্রেটারি ছায়েদ আহমদ বলেন, “রাস্তার এই বাজে অবস্থার কারণে বাজারে মানুষ আসতে চায় না, ফলে দিনদিন ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ যাচ্ছে।”

অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সামছুল ইসলাম বলেন, “এই রাস্তাটি এখন যেন মরণ ফাঁদ। এই দুই-আড়াই কিলোমিটার রাস্তা পার হতে আমাদের আধা ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে।”

তারাপাশা হাই স্কুল এন্ড কলেজের ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শতাব্দী দেব বলেন, “গত বছরের নভেম্বর মাসে বাজারের রাস্তা ভাঙা হলেও এখন পর্যন্ত নতুন করে কাজ শুরু হয়নি, ফলে স্কুলের সামনের এই রাস্তায় বিশাল বিশাল গর্ত হয়েগেছে। যার জন্যে এইদিকে গাড়ি আসতে চায় না,  এমনকি আসতে চাইলেও ভাড়া নিচ্ছে অতিরিক্ত।”

স্থানীয় এক সিএনজি চালক জানান, “এ রাস্তা দিয়ে চলতে গিয়ে প্রতিদিনই গাড়ির নাট-বল্টু ঢিলে হয়ে যায়। মাসে পাঁচ-ছয় হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হয় শুধু মেরামতে।”

জানা যায়, এ.ডি.বি এর অর্থায়নে এফ.আর.ই.এ.ডি (Flood Reconstruction Emergency Assistance Project) নামক রাস্তার প্রজেক্টটি (৮,৪২৫ মিটার রাস্তার কাজ) শুরু হয় গতবছর স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের আমলে। ঠিকাদার মোঃ মুহিবুর রহমানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোঃ মুহিবুর রহমান এন্ড আর.এ.বি.আর.সি.এ প্রাইভেট লিমিটেড জেবি – এর সাথে ১১ কোটি ৬১ লক্ষ টাকার চুক্তি মূল্যের এই প্রজেক্ট শুরু হয় ০৮-০৫-২০২৪ এ , যার শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি মাসের ২ জুলাই অর্থাৎ ০২-০৭-২০২৫। যার প্রাক্কলিত মূল্য ১১ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা।

রাস্তা কাজ কেন শেষ হলো না জানতে চাইলে ঠিকাদার মোঃ মুহিবুর রহমান বলেন, “১২ থেকে ১৬, ১৬.৬ এবং ১৮ ফুট রাস্তার বরাদ্দের জন্য দেরি হয়েছে। কাজ শুরু করে দিব এবং আগামী আগষ্ট মাসের শেষের দিকে শেষ হয়ে যাবে।”

রাস্তার কাজ শেষ না হওয়ায় জনগণের ভুগান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে রাজনগর উপজেলা প্রকৌশলী রাজু সেন বলেন, “ঠিকাদারের অসুস্থতার কারণে দেরি হয়েছে। ইতিমধ্যে ৬ হাজার মিটার কাজ শেষ হয়েছে, বাকি ২,৪২৫ মিটার রাস্তা শুরু হলে আমরা আশাবাদী দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।”

কবে নাগাদ শেষ হবে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “আগামীকাল (২৩ জুলাই) কাজ শুরু করবে ঠিকাদার, কাজ শুরু করলে ৫-৭ দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।”

কোন কারণে কাজ শেষ না হলে তার বিরুদ্ধে কোন
ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না তা জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, “নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেলে ২৮ দিনের ভেতরে ঠিকাদার কারণ দর্শানো এবং সময় চেয়ে নেয়ার কোন আবেদন না করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসনের অবহেলা এবং দীর্ঘসূত্রতার কারণে তারা বছরের পর বছর এই ভোগান্তি সহ্য করে আসছেন। এলাকাবাসী দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়ে ইতোমধ্যে মানববন্ধন ও সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।